কোরিয়ান ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য 

জেনে নিন কোরিয়ান ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

কে-পপ, কোরিয়ান স্কলারশিপ কিংবা কোরিয়ান ভিসা এর যেকেনো বিষয়ে আগ্রহী ব্যাক্তির উচিত শুরুতে কোরিয়ান ভাষা নিয়ে রিসার্চ করে। কোরিয়ান কিছু কমন শব্দ শিখে রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য জানা থাকলে খুব দ্রুত কোরিয়ান ভাষায় টানা ২/৩ ঘন্টা কথা বলার সক্ষমতা অর্জন করে ফেলা যাবে। তবে চলুন, পুরো প্রক্রিয়াটিকে সহজ করতে কোরিয়ান ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়েই আজ আলোচনা করা যাক। 

কোরিয়ান ভাষার পরিচয় কি?

কোরিয়ান ভাষা মূলত এমন একটি ভাষা যা একইসাথে দু’টি দেশের সরকারি ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ভাষা মূলত উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ভাষা। এই ভাষাটি মূলত বয়সের দিক দিয়ে বেশ পুরোনো এবং কিছুটা আনকমন হওয়ায় মানুষের আগ্রহের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 

বর্তমানে চীনসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশে এই কোরিয়ান ভাষার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। ধারণা করা হয় সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮০.১ মিলিয়নেরও বেশি জনগণে এই কোরিয়ান ভাষা ব্যবহার করে থাকে বা এই ভাষায় কথা বলে থাকে। তবে আপনি যদি রাজনৈতিক দিক দিয়ে উত্তর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য দেশে ব্যবহৃত কোরিয়ান ভাষার মিল খুঁজতে যান সেক্ষেত্রে কিছুটা হতাশ হতে হবে। কারণ এই তিন ক্ষেত্রেই কোরিয়ান ভাষার কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যাইহোক! বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। 

কোরিয়ান ভাষার ইতিহাস কি? 

পৃথিবীতে প্রথমবার ব্যবহার করার সময় ব্যাক্তিরা যে’কটি ভাষায় মারাত্বক ভুল করে থাকে, কোরিয়ান ভাষা হলো সে’কটি ভাষার মাঝে অন্তর্ভূক্ত অন্যতম একটি কঠিন ভাষা। তবে এই কঠিন ভাষা একক ভাষা থেকে বিকশিত হয়নি বলেই হয়তো নানান জাতের ভাষা মিশ্রণের কারণে তা কিছুটা কঠিন ঠেকছে। তার পাশাপাশি ভাষাটি যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়েও নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পেরেছে। বিশেষ করে বর্তমানে প্রচলিত আধুনিক কোরিয়ান ভাষার সমৃদ্ধি কিন্তু লক্ষ্য করবার মতো। 

ধারণা করা হয় বর্তমানে ব্যবহৃত আধুনিক কোরিয়ান লিখনপদ্ধতি রাজা সেজং এর রাজত্বকালে ১৪৪৩ সালে তৈরি করা হয়। তবে তার পূর্ব পর্যন্ত অন্যান্য কোরিয়ান স্ক্রিপ্টগুলি কোরিয়ান শব্দের বা বাক্যের সম্পূর্ণ রূপ প্রদান করতে একটি জটিল সিস্টেমের লিখনপদ্ধতি ব্যবহার করতো। সেই লিখনপদ্ধতি আবার তৈরি করা হয়েছিলো সরাসরি চীনা ভাষায় জগাখিচুড়ি হওয়া এবং কঠিনভাবে তৈরি করা কিছু কোরিয়ান অক্ষরের সাহায্যে। 

শুরুর দিককার কোরিয়ান লিখনপদ্ধতিতে চীনা ও কোরিয়ান ভাষার মধ্যে পার্থক্য ছিলো দেখার মতো। ফলে পুরোপুরি নতুন এই লিখনপদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে মনের ভাষা বোঝানোর বিষয়টি যথেষ্ট কঠিন মনে হচ্ছিলো। তাছাড়া সেসময় কোরিয়ায় শুধুমাত্র অভিজাতরাই চাইনিজ ভাষা অধ্যয়ন করে কোরিয়ান ভাষায় লিখনপদ্ধতিতে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো। সবমিলিয়ে পরিস্থিতির কারণে ধীরে ধীরে লিখনপদ্ধতির আওতাভুক্ত হয় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোরিয়ান অক্ষর এবং শব্দগুলি। 

কোরিয়ান ভাষা শ্রেণিবিভাগ কি কি? 

কোরিয়ান ভাষাভাষী মানুষেরা কোরিয়ান ভাষাকে মূলত দু’টো শ্রেণীতে ভাগ করে ব্যবহার করে৷ কোরিয়ান ভাষার এই শ্রেণীবিভাগ মূলত এভাবে সাজানো হয়েছে: 

  • দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল উপভাষা 
  • উত্তর কোরিয়ার ফিয়ংইয়াং উপভাষা

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল উপভাষা 

এটি মূলত কোরিয়ান ভাষার Gyeonggi উপভাষা (경기 방언) বা সিউল উপভাষা (서울 사투리/서울말)। বর্তমানে কোরিয়াতে ব্যবহৃত প্রমিত ভাষার যে ভার্সনটি প্রচলিত অবস্থায় রয়েছে সেই ভাষার ফর্ম তৈরি করা হয়েছে এই উপভাষার উপর ভিত্তি করেই। সমগ্র কোরিয়ান উপদ্বীপে সিউলের এই ভাষাটির প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অংশ সিউল এবং ইনচিওন নামক শহরগুলিতে এই সিউল উপভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। 

একটি রিসার্চ অনুসারে বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার এই সিউল উপভাষা তুলনামূলকভাবে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন কারণে এই ভাষার শেখান প্রতি অনেকেই মারাত্মকভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে অনলাইনে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন কোর্সের। এমনকি বাংলাদেশেও অফলাইনে কোর্স জয়েন হয়ে এই সিউল উপভাষা Gyeonggi শিখতে পারবেন আপনিও! তাছাড়া এই ভাষার শেখার বিভিন্ন বই ফলো করার সুযোগ তো থাকছেই! 

উত্তর কোরিয়ার ফিয়ংইয়াং উপভাষা

এটি মূলত উত্তর কোরিয়ার একটি জনপ্রিয় কোরিয়ান উপভাষা। যা বেশ বহুদিন ধরে উত্তর-পশ্চিম কোরিয়ান অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ উপভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উত্তর কোরিয়ার এই প্রমিত কোরিয়ান ভাষাকে আবার মাল-মশলার সাহায্যে ব্যবহার করছে চীন। বলা হয়ে থাকে মোটামুটি ৫০০ বছর ধরে জোসেন-যুগের কোরিয়ার কোরিয়ান ভাষার মান এবং উত্তর কোরিয়ান ভাষার মান উভয়ই প্রমিত কোরিয়ান ভাষার ভিত্তি হিসাবে কাজ করছে। 

এই ফিয়ংইয়াং কোরিয়ান উপভাষায় আটটি স্বরতন্ত্র ব্যবহার করা হয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে অন্যান্য উপভাষার জন্য যে প্যালাটালাইজেশন ঘটেছে তা ফিয়ংইয়াং উপভাষায় পুরোপুরি অনুপস্থিত। এদিক দিয়ে ফিয়ংইয়াং উপভাষাকে বেশ ইউনিক কোরিয়ান উপভাষা হিসাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। 

কোরিয়ান ভাষায় প্রচলিত উপভাষা 

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল উপভাষা এবং উত্তর কোরিয়ার ফিয়ংইয়াং উপভাষা ছাড়াও কোরিয়ান ভাষার বিভিন্ন উপভাষা প্রচলিত রয়েছে। তা দুই কোরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার আঞ্চলিক উপভাষাগুলি হলো কিয়নসাং, চুংচং, চোল্লা এবং চেজু। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার আঞ্চলিক উপভাষাগুলি হলো হামকিয়ং, পিয়ংগান এবং হোয়াংহাই। 

মজার ব্যাপার হলো এসব উপভাষার কিছু উপভাষা সহজে পারস্পরিকভাবে বোধগম্য নয় বা একটির সাথে অন্যটির কোনো মিল নেই। এছাড়াও বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যেও কোরিয়ান ভাষার অন্য আরেকটি উপভাষা তৈরির প্রয়োজন পড়েছে। যা কোরিয়ান ভাষার আলতাইক নামে পরিচিত। এই আলতাইককে একটি উত্তর এশীয় ভাষার অংশ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। যার মধ্যে তুর্কি, মঙ্গোলিয়ান এবং জাপানিজ ভাষাও রয়েছে। 

কোরিয়ান ভাষার বর্ণমালা পরিচিতি কি? 

শুরুতেই বলে রাখি কোরিয়ান ভাষার সরকারী বর্ণমালাকে হাঙ্গুল বলা হয়ে থাকে। আর যারা হাঙ্গুল শব্দের মিনিং নিয়ে কনফিউজড তাদের বলে রাখি হাঙ্গুল শব্দে হান (한) মানে মহান এবং গুল (글) মানে লিপি। যা দক্ষিণ এবং উত্তর কোরিয়া উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই বর্ণমালাগুলো ১৪৪৩ সালে জোসেন রাজবংশের মাধ্যমে চালু করা হয়। এখানে বলে রাখা ভালো কোরিয়ান ভাষার বর্তমান বর্ণমালার সংখ্যা ৪০ টি। যা ১৯ টি ব্যঞ্জনবর্ণ বর্ণ এবং ২১ টি স্বরবর্ণ অক্ষর নিয়ে গঠিত।

এই ৪০ টি বর্ণমালায় আপনি আবার একইসাথে কিছু অপ্রচলিত অক্ষর এবং সংমিশ্রিত অক্ষরও দেখতে পাবেন। ইংরেজির বিপরীতে অক্ষরগুলিকে সাধারণত প্রতিটি শব্দাংশের জন্য ২ থেকে ৩ অক্ষরের ব্লকে একত্রিত করে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ উচ্চারণে “হান” আসা শব্দটিকে “ㅎㅏㄴ” হিসাবে লেখা হয় না। বরং এটিকে “한” হিসাবে লেখা হয়। 

এবার আসি কোরিয়ান বর্ণমালার বৈশিষ্ট্য কিংবা সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক সম্পর্কে। কোরিয়ান বর্ণমালার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো অক্ষরগুলির নকশা। প্রতিটি অক্ষরের আকৃতি কিন্তু এক নয়। একেকটি একেক রকমের। যা সাধারণত শব্দের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ডিজাইন করা হয়েছে। 

কোরিয়ান ভাষার ক্ষেত্রে মূলত ব্যঞ্জনবর্ণগুলিকে ব্যাক্তির মুখের উচ্চারণের আকৃতি বা টানের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। যা কোরিয়ান ভাষার স্বরবর্ণগুলির অনুভূমিক বা উল্লম্ব রেখাগুলি সনাক্ত করার বিষয়টিকেও সহজ করে তোলে। ও হ্যাঁ! কোরিয়ান ভাষার ক্ষেত্রে কিন্তু প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণের নিজস্ব নাম আছে।

কোরিয়ান ভাষায় লিখন পদ্ধতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কি কি? 

কোরিয়ান ভাষা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে মূলত রাজা সেজং এমন একটি লিখন পদ্ধতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা তার সমস্ত শ্রেণীর প্রজাদের একে অপরের সাথে এবং সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে কাজে লাগবে। মোটকথা কোরিয়ান ভাষা আবিষ্কারের বিষয়টি বিশেষ করে কোরিয়ান ভাষায় লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের বিষয়টি সেই সময়ে কোরিয়ান সমাজে একটি খুব বাস্তব সমস্যার সমাধান ছিলো।

যাইহোক! কোরিয়ান লিখনপদ্ধতিকে আপনি বর্ণানুক্রমিক পাঠ্যক্রমও বলতে পারেন। যা একইসাথে একটি বর্ণমালা, একটি পাঠ্যক্রম এবং একটি লগগ্রাফির ভুমিকা পালন করে থাকে। কোরিয়ান লিখনপদ্ধতির ক্ষেত্রে যেমন একটি একক শব্দের জন্য একটি দীর্ঘ বর্ণের প্রয়োজন হতে পারে, ঠিক তেমনই এক সময়ে কেবলমাত্র একটি ধ্বনির অভাবে কিন্তু ফোনমে-গ্রাফেম চিঠিপত্র অসম্পূর্ণও থাকতে পারে। 

কোরিয়ান লিখনপদ্ধতিতে যে-সব শব্দ সম্পর্কে আপনার জানতেই হবে: 

  • টার্গেটেড লেটার
  • কিছু চাইনিজ ক্যারেক্টার
  • টেস্টিং ওয়ার্ড এবং লেটার
  • ছড়া সৃষ্টিতে কাজে লাগে এমন কিছু ওয়ার্ড
  • বর্ণানুক্রমিক সিস্টেম

কোরিয়ান ভাষায় থাকা তারতম্যগুলি কি কি? 

মূলত দুটি রাজ্য আলাদা হওয়ার কারণে কোরিয়ান ভাষাটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ভিন্ন হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে দায়ী করা উচিত এই ভাষার মাঝে থাকা অন্তর্নিহিত দ্বান্দ্বিক পার্থক্যগুলিকে। আর যদি সরাসরি কোরিয়ান ভাষায় থাকা তারতম্য সম্পর্কে জানতে চান সেক্ষেত্রে বলবো, এই ভাষায় তারতম্য তৈরির ক্ষেত্রে কাজ করেছে দুই কোরিয়ায় ব্যবহৃত ভাষার অর্থোগ্রাফি ও উচ্চারণে কিছু পার্থক্য এবং নতুন কিছু শব্দের উৎপত্তি। তবে তারতম্য যাইহোক! পুরো কোরিয়ান ভাষাটিই যথেষ্ট আকর্ষনীয় এবং ইন্টারেস্টিং। যা রপ্ত করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ বা একঘেয়েমি কাজ করার কথা নয়। 

ইতি কথা

কেবলমাত্র আজকের এই লেখার সাহায্যেই কোরিয়ান ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি কোরিয়ান ভাষা শেখার পূর্বে যদি আপনি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন সেক্ষেত্রে শেখার এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট সহজ হয়ে যাবে। আপনার এই কোরিয়ান ভাষা নিয়ে রিসার্চ প্রজেক্ট এবং শেখার আগ্রহ শতভাগ সফল হোক। এমনটা কামনা করে আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করছি৷ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *